গত কয়েক বছর ধরেই যে ব্যাপারটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা হলো এন্টার্কটিকা মহাদেশের ওজোনস্তরের গর্ত রেকর্ড পরিমাণ প্রসারিত হয়েছে এবং তা মোটেও আমাদের জন্য সুসংবাদ নয়! ২০১৯ সালে বিজ্ঞানীরা দেখতে পান এন্টার্কটিকার এই ওজোনস্তরের গর্তটি ১৯৮২ সালে সর্বনিম্ন মাত্রায় প্রসারিত হয়েছিল। কিন্তু ২০২০ সালের উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায় গত কয়েক বছরে এই মাত্রা ভয়াবহ ভাবে বেড়ে গিয়েছে।
জার্মান এরোস্পেস সেন্টারের ম্যানেজার দিয়াগো লোয়েলো জানান নিয়মিত নজরদারিতে দেখা যায় ২০২০ এর আগস্ট মাস পর্যন্ত ওজোনের গর্তটি এত পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে তা প্রায় সম্পূর্ণ এন্টার্কটিকা মহাদেশকেই ঢেকে ফেলে। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির স্যাটেলাইট সেন্টিনেল-৫পি থেকে পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় এই বছর ওজোনস্তরের গর্তটি সর্বোচ্চ আকার প্রায় ২৫ মিলিওন বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে নিয়েছে। ঠিক ২০১৮ এবং ২০১৫ সালেও এরকম হয়েছিল। সেসময় প্রায় ২৩ মিলিওন এবং ২৫ মিলিওন বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃতি ঘটেছিল ওজোনস্তরের গর্তটির। এটাও খুব অনিশ্চিত যে ওজোনস্তরের গর্তের ব্যাস প্রতিবছর ভিন্ন আনুপাতিক হারে হ্রাস-বৃদ্ধি। ২০১৮ সালে যে গর্তটি তৈরি হয়েছিল তা ২০২০ এর সদৃশ। কিন্তু বর্তমান অবস্থা গত ১৫ বছরেও এতটা ভয়াবহ হয়নি।

প্রতিবছরই ওজোনস্তরের গর্তের এমন সংকোচন-প্রসারণ চলতে থাকে। যখন স্ট্রাটোস্ফিয়ার স্তরের তাপমাত্রা কম থাকে অথবা ঠান্ডা হতে শুরু করে তখন ওজোনস্তরের আয়তন হ্রাস পায় ফলে তা সংকুচিত হয়। পোলার স্ট্রাটোস্ফিয়ার মন্ডলের তাপমাত্রা যখন -৭৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যায় তখন বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়া ওজোন কণা গুলোকে ধ্বংস করে দেয় সৌর বিকিরণের মাধ্যমে। কিন্তু এ বছর কোনোভাবেই ওজোনস্তরের গর্তের হ্রাস ঘটছিল না বরং ডিপ্লেশন লেয়ার ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ২০১৯ সালে যে বিশাল গর্ত তৈরি হয়েছিল তাঁর মূল কারণ হচ্ছে উল্কাপাত। কিন্তু এ বছরের হিসাব সম্পূর্ণ ভিন্ন। বাহ্যিক কোনো কারণ ছাড়াই প্রচুর পরিমাণ ওজোন গ্যাসের নির্গমনের কারণে ক্রমেই গর্তের ব্যাস বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন যত দ্রুত সম্ভব এই মন্ট্রিয়েল ওজোন ডিপ্লেটিং ক্যামিকেল প্রটোকল বাস্তবায়নের জন্য। এই মন্ট্রিয়েল প্রটোকল হচ্ছে মানবসভ্যতার পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য তৈরিকৃত নীতিমালার এক মাইফলক। এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে হ্রাস করা হয়েছে ক্লোরোফ্লোরো কার্বনের ব্যবহার যা ব্যবহৃত হত রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশন অথবা বিভিন্ন স্প্রে তে। ২০১৮ সালে বিশ্ব মেটিওরোলজিক্যাল সংস্থার একটি গবেষণা দেখিয়েছে যে এন্টার্কটিকার ওজোনের ঘনত্ব পরিবর্তিত হয়ে ২০৬০ সালের মধ্যে ১৯৮০ সালে যেরকম ছিল সেরকম হয়ে যাবে কিন্তু সেটার জন্য আমাদের অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে প্রটোকল গুলো মেনে চলতে হবে। নাহলে যদি বর্তমান বছরের মতো এই অবস্থা আরো কিছু সময় স্থায়ীত্ব লাভ করে তাহলে অবস্থা ভয়ংকর হতে বেশিক্ষণ লাগবেনা। গবেষকরা বলছেন এমন পরিস্থিতির জন্য দায়ী পোলার ভর্টেক্স যা স্ট্রাটোস্ফিয়ারের উপরের স্তরের তাপমাত্রা কে ঠান্ডা রাখছে।

যেটাই হচ্ছে তা আমাদের জন্য ভালো নয় কোনোভাবেই। এবং এই গর্তটি খুব দ্রুত সেরে উঠবে এবনও না। এখন আমাদের লক্ষ্য থাকবে সর্বনিম্ন পরিমাণে ওজোন গ্যাস সহ গ্রিন হাউজ গ্যাসের নির্গমন নিশ্চিত করা, এন্টার্কটিকার বায়ুমণ্ডলের স্তর গুলো যাতে পুনরায় সঠিক আকারে ফিরে আসে এটাই সবার কামনা।
তথ্যসূত্রঃ The Time