ব্ল্যাকহোল নিয়ে আমাদের কারোই জানা বা আগ্রহের কোনো শেষ নেই। কয়েকদিন আগেই তো জীবন্ত ব্ল্যাকহোলের ছবি আমরা দেখতে পাই। অনেক ধরনের ব্ল্যাকহোলের কথা শুনেছি যারা প্রত্যেকেই চমকপ্রদ ও রহস্যময় বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। আজ জানব এমন এক সুপার ম্যাসিভ বা অতিকায় ব্ল্যাকহোলের কথা যার মহাকর্ষীয় তঙ্গের জালে আটকা পড়ে আছে ৬ টি অতিকায় গ্যালাক্সি! জ্বী, ঠিকই শুনেছেন। জেনে আসি ঘটনা টা কী।

জ্যোতির্বীজ্ঞানীরা সম্প্রতি আবিষ্কার করেছেন এমন এক ব্ল্যাকহোল যার মহাজাগতিক “মাকড়শার জালে” আটকা পড়েছে কিছু গ্যালাক্সি। ঠিক বিগ ব্যাং এর পরবর্তী মুহূর্তেই নাকি এরকম ঘটনাটি ঘটে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা এক গবেষণাপত্রে। মহাবিশ্ব শুরুর প্রাথমিক দিকে সৃষ্টি হওয়া ব্ল্যাকহোল সমূহের উৎপত্তি ঘটেছিল নক্ষত্রের সংঘর্ষে হওয়ার মাধ্যমে। কিন্তু যে বিষয়টা বিজ্ঞানীদের ধাঁধাঁয় ফেলেছিল তা হলো কীভাবে এই ব্ল্যাকহোল গুলো এত অতিকায় রূপ ধারণ করে! নতুন আবিষ্কৃত উল্লেখ্য ব্ল্যাকহোলটি সৃষ্টি হয়েছে তখন, আমাদের মহাবিশ্বের বয়স যখন এক বিলিওন বছরও হয়নি। সূর্যের চাইতে এটি এক বিলিওন গুণ বেশি ভারী এবং আবিষ্কার করে দক্ষিণ ইউরোপিয়ান অবজারভেটরি। বিজ্ঞানীরা জানান যে এরকম ব্ল্যাকহোল গুলো হয়ত এই রহস্যের জোট খুলবে যে কীভাবে এত অতিকায় ভাবে তাঁরা পরিণত হয় যেমনটা আমাদের ছায়াপথের কেন্দ্রেও রয়েছে একটি। জ্যোতির্বিজ্ঞানিরা মনে করছেন গ্যালাক্সিতে আবদ্ধ থাকার দরূন গ্যালাক্সি থেকে উৎপন্ন গ্যাসই ব্ল্যাকহোল গুলোর শক্তি যোগাচ্ছে ও তাঁরা অতিকায় রূপ ধারণ করছে।

ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ এস্ট্রোফিজিক্সের এক বিজ্ঞানী মার্কো মিগনলি জানান মহাজাগতিক ফিলামেন্ট(Cosmic Web Filament) হচ্ছে মাকড়শার জালের মতোই তৈরি একধরনের সুতো। গ্যালাক্সি সমূহ এবং ব্ল্যাকহোল সেই ফিলামেন্টের ঘনত্ব যে জায়গায় বেশি সেখানেই উৎপত্তি লাভ করে এবং বৃদ্ধি পায়। আপনি হয়ত বেড়াজালে পড়েছেন যে এ আবার কেমন জাল! সহজ ভাষায় বলি, কসমিক ওয়েব ফিলামেন্ট হলো এক বিশেষ ধরনের আন্তঃগ্যালাক্টিক ব্যবস্থা যা খুবই সূক্ষ্ম তন্তুর ন্যায় এবং তৈরি হয় মহাবিশ্ব সৃষ্টির সময়ে উৎপন্ন হওয়া হাইড্রোজেন গ্যাস থেকে। এক কথায় হাইড্রোজেন গ্যাসের সুতো! কিন্তু এই ব্যাখ্যাই অতিকায় গ্যালাক্সিদের সৃষ্টির মূল ব্যাখ্যা নয়, এটা এখনও অস্পষ্ট যে সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল কীভাবে তৈরি হয়। বিজ্ঞানীরা মনে করেন এই ধরনের ওয়েব ফিলামেন্ট বা তন্তু তৈরি হয় ডার্ক ম্যাটারের সাহায্যে যা মহাবিশ্বের প্রাথমিক সময়ে গঠিত হয়। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কলিন নরম্যান জানান এই ধারণা এটাই বুঝায় যে দূরবর্তী এবং অতিকায় ব্ল্যাকহোল গুলো সৃষ্টি হয়েছে ডার্ক ম্যাটারের ফুল স্কেল উপস্থিতিতে। আগে সেগুলোর অস্তিত্ব ডিটেক্ট করা যায়নি অনুসন্ধানের সীমাবদ্ধতা থাকায়।

ইএসও এর মতে সম্পূর্ণ কসমিক ওয়েবের আকার মিল্কিওয়ের আকারের চেয়ে ৩০০ গুণ বড়। বিজ্ঞানীরা বলছেন এই আবিষ্কারের মাধ্যমে তাঁরা সমুদ্রে ভাসমান আইসবার্গের উপরের অংশটুকুর দেখা পেয়েছেন যার অতলে আছে আরো বিস্তৃত ও সুবিশাল কাঠামো। এই অনুসন্ধান টি সেসব ব্ল্যাকহোলের সৃষ্টি সম্পর্কে তথ্য দিতে পারবে যারা এতটাই ঘন যে আলোও এদের মহাকর্ষীয় টান থেকে রক্ষা পায়না। সেপ্টেম্বর মাসে প্রায় ১৫০০ বিজ্ঞানী রিপোর্ট পেশ করে জানান দেন যে তাঁরা মহাকর্ষীয় তরঙ্গ GW190521 আবিষ্কার করেন। এই তরঙ্গটি তৈরি হয় দুটো ছোটো গ্যালাক্সির সংঘর্ষের ফলে। ৭ বিলিয়ন বছর আগে দুটো গ্যালাক্সির সংঘর্ষের ফলে এই চরম শক্তি সম্পন্ন তরঙ্গটি তৈরি হয় এবং এখন পর্যন্ত মহাবিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ঘটনা বিগ ব্যাং এর পর। ১৪২ সৌরভরের সময় তরঙ্গটি পরিণত হয় প্রথম “ইন্টারমিডিয়েট মাস” ব্ল্যাকহোলে।

বিস্তারিত অনুসন্ধান আরও জানান দেয় যে বিজ্ঞানীরা যা ভাবছেন অতিকায় ব্ল্যাকহোলের সৃষ্টি সম্পর্কে, এই তরঙ্গের উৎপত্তি সেসব থিওরি কে প্রশ্নবিদ্ধ করে এই মর্মে এটা দেখিয়ে যে ব্ল্যাকহোল গুলো তৈরি হয়েছে মধ্যম আকারের অন্য ব্ল্যাকহোল গুলোর পুনঃপুনঃ সংঘর্ষের মাধ্যমে। এবং একসময় অতিকায় রূপ ধারণ করে নিজের শক্তির ফাঁদে ফেলেছে সবকিছুকে, গ্যালাক্সি থেকে আলো সবই আবদ্ধ ব্ল্যাকহোলটির মায়াজালে!
তথ্যসূত্রঃ Agence France-Presse, sciencealert, journal of Astronomy & Astrophysics.